আপনি কি সত্যিই প্রকৃত ও খাঁটি কবুতর পালক?
গতকাল আমার কাছে এক ভাই জানতে চাইলেন যে, তার একটা কিং কবুতর ৪/৫ দিন ধরে ভীষণ অসুস্থ,সাদা সাদা পায়খানা করছে ও কিছু খাচ্ছেনা। উনি প্রথমে একদিন renamycin দিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে কাজ না হাওয়াই doxivet দিয়েছিলেন,তাতেও কাজ না হাওয়াই আরেকটি অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করেছিলেন, পঞ্চম দিনে তিনি আরেকজনের কথামত ciprocin ব্যাবহার করার আগে,কোনভাবে তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। সবকথা শুনে হতাশ ও ইস্তম্বিত হলাম। কি বলব ভাষা হারিয়ে ফেললাম। কিং কবুতর বলে বা হইত হায়াত জোরে ৫ দিন বেচে ছিল, কিন্তু অন্য কবুতর হলে এই ধরনের ঘটনা আর রোগে এতদিন বাঁচার কথা না। যদি রোগ নাও হত তারপরও ৫ দিন পানি ও খাবার না খাওয়ার জন্য যে কোন সুস্থ কবুতরও ৫ দিনে পানি শূন্যতা ও পুষ্টির অভাবে এমনিতেই মারা যেত। যাহোক, তাকে সব কথা জানিয়ে প্রথমে নাক্স ভূম ৩০(হমিও) ৩ ফোঁটা দিতে বললাম, তারপর oracin k দিতে বললাম, যেহেতু তিনি অনেক উঁচু রেঞ্জের অ্যান্টিবায়টিক গুলো ব্যাবহার করেছিলেন, তাই তার রেষটা কাটানোর জন্য প্রথমটা ও তারই প্রায় সমমানের অ্যান্টিবায়টিক দিয়েছিলাম। তিনি শুধু অ্যান্টিবায়টিক টাই ব্যাবহার করেছিলেন তিনি। আর ফলাফল যা হবার তাই হল! রাতে তিনি আবার ফোন করে দুঃসংবাদটা জানালেন! শুনে খুব দুঃখ পেলাম, এই দুঃখের ভিতর তিনি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত যোগ করলেন যে, এই সাথে আরও ২ টা লক্ষা মারা গেছে একই দিনে, ব্যাপারটা আমাকে শক করল!কেন? জিজ্ঞাস করলাম এবং পুরো ইতিহাস শুনে জানলাম যে, তিনি সাত তলায় কবুতর পালেন ২ বছর ধরে, আর সাত তলায় উঠা নামা কষ্টকর বলে তিনি সকালে একবার খাবার ও পানি দেন। কারন হিসাবে তিনি জানালেন যে, তিনি সময় পান না। ইত্যাদি ইত্যাদি। কথাটা কোন মতেই গ্রহন করতে পারলাম না। আমার সাধারনত কখনও ঘুমের সমস্যা হয় না, কিন্তু এই ঘটনা শুনার পর মাঝ রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারলাম না। তাই বসে এই ঘটনাটা সবার সাথে শেয়ার করার জন্য লিখতে বসলাম। এটা তো ছিল বিছিন্ন একটা ঘটনা মাত্র বা সাধারন কেস স্টাডিও বলতে পারেন, এরকম হাজারও ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। যদি কারো মধ্যে বিন্দুমাত্র ভালবাসা বা মায়া থাকে তাহলে কখনও এ ধরনের কাজ করতে পারতেন না। এটা যদি একটা কবুতর না হয়ে নিজের বা আপন জনের ক্ষেত্রে হত তাহলে কি সেক্ষেত্রেও এ রকম করতেন? এখানে একটু বলে রাখা ভাল, অনেকে কবুতর পালেন শখে, কেও ব্যাবসার চিন্তা থেকে, কেও লোক দেখান আবার কেও বা নামের জন্য যে, আমার এত জোড়া দামি কবুতর আছে! কিন্তু কারন যায় হোক না কেন, একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন যে, আপনার কারনে যদি কোন প্রাণী মারা যায় বা অসুস্থ হয় বা কোন অসুবিধাই পড়ে তাহলে আপনি যত বড়ই পীর আওলিয়া হন বা সাধু সন্ন্যাসী হন, যতই নামাজ কালাম পড়েন আর যতই ঈশ্বর কে ডাকেন, নিশ্চিত করে বলতে পারি, আপনার কোন কিছুই কোন কাজে আসবে না। ছোট বেলায় পড়েছিলাম,”জীবে দয়া করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বরে।” তাই দুটা হাত জড় করে বলছি,দুটা পায়ে ধরে বলছি। যদি ঠিকমত পালতে না পারেন, তাহলে কাওকে দিয়ে দেন বা ছেড়ে দেন বা বিক্রি করে দেন। কিন্তু কোন প্রাণী কেই অনর্থক কষ্ট দিবেন না অনুগ্রহ করে ।
আরেকটি ঘটনা মনে পড়ছে যা আপনাদের সাথে আবারও ভাগ করতে চাই, কিছু দিন আগে একভাই জানালেন যে তার কবুতরের চোখে পানি পড়ছিল আর পেচুটি জমছিল, কাওকে না পেয়ে,তিনি তার বাচ্চার জন্য ব্যাবহার করা চোখ উঠার মলম লাগিয়ে দিয়ে উপকার পেয়েছেন। শুনে মনটা অসামান্য খুশিতে ভরে গেল। আরে এটাই ত দরকার, এরাই ত তারা যারা তাদের প্রাণীকে তাদের আপনজনের মত ভালবাসে। আর এরাই ত প্রকৃত ও খাঁটি কবুতর প্রেমী ও পালক। আমাদের এই খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এই ধরনের লোকই ত বেশি দরকার। হোক না তাদের ১ বা ২ জোড়া কবুতর, তাতে কি যেখানে ভালবাসা আছে সেখানে ত সাফল্য আসবেই আসবে। আর এই ১ বা ২ জোড়াই ত একদিন ১০০ বা ২০০ জোড়া হবে তাতে কোনই সন্দেহ নাই। কবুতর ব্রিডার তাকে বলে না যার ৫০০ জোড়া আছে, কিন্তু যত্নের অভাবে রোগে শোকে প্রতিমাসে ৫ জোড়া করে মারা যাই, প্রকৃত ব্রিডার তারাই যারা ৫ জোড়া কবুতরকেই সফল ভাবে পালে। আসুন আমরা সকলেই দোয়া করি যেন, আমারা সকলেই প্রকৃত ও খাঁটি কবুতর পালক হতে পারি।(আমিন।)
(এই লিখা কাওকে ব্যাক্তিগত আক্রমন বা ছোট করার মন মানসিকতা থেকে না,বরং সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও উৎসাহিত করাই এর মুল উদ্দেশ্য। তারপরও যদি কার মনে নিজের অজান্তে কষ্ট দিয়ে থাকি তবে অনুগ্রহ করে ক্ষমা করে দিবেন।)
0 $type={blogger}:
Post a Comment