আমার এক পরিচিত আমাকে একদিন জানালেন যে তার একজোড়া কবুতর ৪ টা ডিম দিয়েছে এবং তিনি নিশ্চিত করে বললেন যে এটা নর আর মাদি, আমি তাকে বুঝানর পরও তিনি তর্ক করলেন, আমি আর কিছু বললাম না, কিছুদিন পর তিনি বুঝতে পারলেন যে আসলে দুটাই মাদি। আসলে এটা উনার কোন দোষ নাই । আবার অনেক ক্ষেত্রে যখন বেশি মারামারি করে তখন বুঝা যাই যে দুটি নর। কারন অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়।
সৌখিন কবুতরের ক্ষেত্রে এটা খুবই কঠিন নর ও মাদি আলাদা করা এবং অনেক অভিজ্ঞ সদস্যদেরও অনেক সময় বোকা হয়ে যান আর এটা সবসময় সহজ নয়। আর সেটা যদি বাচ্চা হয় তাহলে ত কথাই নাই, কাজটি তখন কঠিনতর হয়ে যায়।
আজ পর্যন্ত যদিও এ ব্যাপারে কোন সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া হয় নি, ফলে অনেক কিছুই প্রাইয় অজানাই রয়ে গেছে। অনেক সময় দুইটা মাদি ঠিক নর মাদির মতই বৈশিষ্ট্য স্বভাব দেখা গেলেও অনেক পরে বুঝা যাই যে আসলে দুটাই মাদি, কিন্তু এর মাজে অনেক মূল্যবান সময় পার হয়ে যায়। আসুন আজ আমি আপনাদের জন্য কিছু তথ্য দিয়ে সাহায্যকারী হতে পারি কিনা।
পুরুষ ও মেয়ে কবুতরের কিছু শারীরিক ও স্বভাবগত কিছু বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য আছে সেগুলো হলঃ
ক) শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃ
============
১) অধিকাংশ ক্ষেত্রে
পুরুষ কবুতর আকারে বড় হয় বিশেষ করে তার মাথা ও চ্যাপ্টা হয়।
মেয়ে কবুতরের শরীর তুলনামূলক ছোট, বিশেষ করে তার মাথা ছোট ও লম্বা হয়।
২) চোখ একটি মুরগি এর হিসাবে বৃত্তাকার হয় না কিন্তু
মেয়ে কবুতরের বৃত্তাকার হয়।
৩) পুরুষ কবুতরের পা ও এর আঙ্গুল সমান ও মসৃণ হয় না, কিন্তু মেয়ে কবুতরের পা অর এর আঙ্গুল প্রায় সমান ও মসৃণ হয়।
৪) উভয় হাতে কবুতর ধরুন (মধ্য লাইন থেকে বুক বরারর নিচে হাত চালায় তাহলে হাড় শেষে একটি স্পেস আছে, তারপর বরাবর একটি আঙ্গুল দিয়ে দেখলে 2 ছোট পাতলা হাড় পাবেন “v” এর মত, তারা একসঙ্গে আসা যেখানে মধ্যে একটি ছোট আঙুল বা তার বেশি ফিট করতে পারে, তাহলে এটি মেয়ে কবুতর যেখানে ডিম পাস হয়। আর যদি ১ বা -২ মিলি ফাক থাকে তাহলে পুরুষ কবুতর। অনেকে পুরুষ বা মাদি পরীক্ষা করার জন্য আঙ্গুল পায়খানার পথে দেন, কিন্তু বিশেষ ভাবে খেয়েল রাখবেন কখনও এটা করবেন না।এতে জরায়ু বা ভিতরে সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।)
৫) পুরুষ কবুতরের মাথা / ঘার ও দেহ একটু মতা একটু লম্বা ও ঘন ও সবল হয়। আর সাধারণত মাদীর মাথা / ঘার ও দেহ কাছাকাছি আরো মেয়েলি বা সূক্ষ্ম হয়।
৬) হ্যাচিং পরে ১ থেকে ৩ দিন পর যদি আপনি
কবুতরের বাচ্চাকে অধিষ্ঠিত করে এর পায়খানা নির্গমনের(vent hole) পথের দিকে খেয়াল করেন তাহলে পুরুষ কবুতরের একটু চ্যাপ্টা বা smile এর মত দেখবেন আর মেয়ে কবুতরের সোজা বা গোল দেখবেন।
৭) পুরুষ কবুতরের গলার রগ মোটা হয় আর মেয়ে কবুতরের তুলনা মূলক ভাবে একটু পাতলা।
৮) পুরুষ কবুতরের ঠোঁট ধরে হালকা করে টান দিলে শে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে, আর মেয়ে কবুতর সাধারণত চুপ করে থাকে বা কোন চেষ্টা করে না।
খ) স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যঃ
============
৯) পুরুষ কবুতরের লেজ ও শরীর ময়লা থাকে কিন্তু মেয়ে কবুতরের শরীর তুলনামূলক পরিষ্কার থাকে। পুরুষ কবুতরের ডাক খুব ঘন ও জোরে হয়, অপরদিকে মেয়ে কবুতরের ডাক থেমে থেমে ও আস্তে ডাকে।
১০) পুরুষ কবুতর হুমকি দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে একটি প্রয়াস চালানোর চেষ্টা করে বা মাদীকে চার্জ করবে বা সাধারণত তার মনোযোগ পেতে হালকা ঠোকর চেহারা নেয় এবং আঘাত করে যদিও এটি ইচ্ছাকৃত ঠোকর নয়। পুরুষ কবুতর গলা ফুলীয়ে একজাগা থেকে লেজ নামিয়ে মাদিকে আক্রমন করে আর মাদি মাখা নাড়িয়ে মাথা উপর নিচ করে এক জাইগাই থাকে।
১১) পুরুষ কবুতর পুরো ঠোঁট ডুবিয়ে পানি পান করে, যেখানে মাদি কবুতর অল্প বা অর্ধেক ঠোঁট ডুবিয়ে পানি পান করে।
১২) পুরুষ কবুতর মেয়ে কবুতরের থেকে বেশি আক্রমনাত্মক হয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে এর বাতিক্রম দেখা যায়। যদিও ডাকের কম্পন দুই জনের সমান হয় না।
১৩) পুরুষ কবুতর সূর্য দুবার আগে বেশি অস্থির থাকে, বিশেষ করে, আর মাদি কবুতর শান্ত থাকে।
১৪) পুরুষ কবুতর কবুতর সূর্য উঠার পর নেস্ত এ অবস্থান নেয়,আর মাদি সারারাত বাসায় বসে থাকে।
১৫) ব্রিডিং এর আগে নর কবুতর মাদির পায়ের কাছে বসে এক ধরনের শব্দ করে, যদিও এ সব গৌণ বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে পড়ে।
১৬) মাদি কবুতর নর কবুতরের মুকে ঘাড়ে ও গলাই ঠোঁট দিয়ে গ্রুমিং করে দেয়। আর মেটিং এর আগে ঠোঁট দিয়ে খওয়ায়ে দেই।
আশা করি এর মাধ্যমে অনেকের অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হবে ও অনেক অনাখাঙ্কিত পরিস্থিতি থেকে বাঁচা যাবে।
0 $type={blogger}:
Post a Comment