দেশে ও বিদেশে এমন কোন খামারী নাই যিনি
কবুতরের ডিম ভেঙ্গে ফেলার অভিজ্ঞতা দেখেননি। কম বেশী সব খামাড়ীকেই এই ধরণের খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আর আগুনে ঘী ঢালার মতো হয় যদি ডিম ইচ্ছে করে ভেঙ্গে এবং তা খেয়ে ফেলে……! কবুতরের কেন ডিম ভাঙ্গে ও খায়? অনেক বড় বড় খামাড়ী এর কোন সদুত্তর দিতে পারেন না বা হয়ত জানেন কিন্তু কারো সংগে এই অভিজ্ঞতা ভাগ করতে চান না। সে যাই হোক। এক্ষেত্রে অনেকে ভাগ্য কে দোষ দেন, অনেকে কবুতর কে দোষ দেন ইত্যাদি। আর এসব বলে নিজের মনকে এক ধরণের সান্ত্বনা দিবার একটা অপচেষ্টা করা হয়। কিন্তু আসলে এর কারন যদি অনুসন্ধান করি তাহলে আমরা আমাদের কেই বেশী দোষারোপ করতে পারি।
এখন আসুন আমরা একটু সংক্ষেপে জেনেনেয় এর মূল কারণঃ
# কবুতর জোড়া যখন নতুন ডিম পাড়ার সময় হয় তখন স্বভাবতই একটু উত্তেজিত ও নার্ভাস থাকে। আর এই সময় তারা লাফালাফী করে ডিম ভেঙ্গে ফেলে।
# পর্যাপ্ত জায়গার অভাব, অসমান বাটী, বাটীতে প্রয়োজনীয় উপাদান (খর কুটা) বা নরম কিছু না দেওয়া।
# যখন একই বাটি না ধুয়ে অনেকের জন্য ব্যবহার করলে।
# কাঁক বা অন্য পাখী বা এর মাধ্যমে বিরক্ত হলে।
# পর্যাপ্ত ও সুষম খাবার সরবরাহ না করা।
# নিয়মিত গ্রিট না দেওয়া।
# ভিটামিন, ক্যালসিয়াম বা প্রয়োজনীয় খনিজ এর অভাব হলে।
# অতিরিক্ত আলো (ডিমে বসা অবস্থায় বেশি আলো হলে তারা অসুবিদা বোধ করে) ।
# লবনের অভাব হলে। নর ও মাদী মারামারি করে ডিমে বসার জন্য আর এটা করতে তারা ডিম ভেঙ্গে ফেলে।
# খামারে বা এর কাছে জোরে শব্দ করলে।
# খামারে বেশী গাদাগাদি করে কবুতর রাখলে।
# বারবার ডিম ধরলে অথবা কবুতর কে ডিম থেকে ঊঠালে।
# অনেক সময় বাচ্চা ফুটার পর ডিমের খোসা না সরালে কবুতর খোসা খেয়ে ফেলে,আড় এ থেকেও ডিম খাওয়ার অভ্যাস হতে পারে।
সাধারণত ভাঙা ডিম নিয়মিত অভ্যাস হলে তারা মাঝে মধ্যে তা থেকে স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করে, আর এটা ক্রমাগত হতে থাকলে, তারা ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ঊঠে। আর একবার এই অভ্যাস হলে তা কাটানো খুবই কঠিন । এজন্য নীচের কিছু কাজ আপনাকে হইত কিছুটা হলেও সাহায্য করবেঃ
১# ডিম ভাঙ্গার যতগুলো কারণ আছে তা দূর করতে হবে।
২# ভাঙ্গা ডিম তাড়াতাড়ি বাটী থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
৩# যে জোড়া ডিম খাবার অভ্যাস আছে তার কাছ থেকে ডিম সরিয়ে প্লাস্টিক ডিম দিতে হবে (উপরের ছবি)। যাতে তাতে ঠোকর দিলেও তা না ভাঙ্গে এতে ওদের অভ্যাস বদলাবে।
৪# নিয়মিত অ্যামিনো এসিড,ক্যালসিয়াম ও খনিজ সরবরাহ করতে হবে।
৫# নিয়মিত খাবার সরবরাহ করা।
৬# প্রয়োজন হলে একটা ডিম ভেঙ্গে তাতে গোল্মোড়ীশ মীক্স করে দিতে হোভে যাতে তারা খাবার সময় তার স্বাদ তা খারাপ লাগে তাহলে সে পরে সে আর ডিম খেটে চাইবে না।
৭# ডিম পাড়ার জায়গাটা একটু অন্ধকার রাখতে হবে যাতে ডিম ভাঙ্গার সুযোগ না পায়।
৮# ভালো বাটী সরবরাহ করা ও ডিম পাড়ার আগে তা দিতে হবে যাতে খাঁচার ভিতর ডিম মেঝেতে পাড়ার সুযোগ না পায়।
৯# এছাড়াও নিয়মিত জীবাণূ বিরোধী ওষধ ছীটাণো যাতে খামারে ডিমের গন্ধ না থাকে, কারণ যাদের ডিম খওয়ার অভ্যাস যাদের থাকে তারা ডিমের গন্ধ পেলে পাগোল হয়ে যায়।
উপরোক্ত ব্যবস্থা গূলো ঠিকমতো গ্রহণ করলে আশা করা যায়, আপনার প্রিয় কবুতরের এই ডিম নষ্ট করার অভ্যাস থেকে আপনি তাকে মুক্ত করতে সফল হবেন। তবে তার আগে অবশ্যই আপনাকেও একটু সচেতন হতে হবে।